যশোর জেলা বাঘারপাড়া উপজেলায় বোলতেঘাটা নামক স্থানে সড়কে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক যাত্রি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কারো অবস্থা আশংকা জনক না হলেও কয়েকজন মারাত্বকভাবে জখম হয়েছে। তাদের মধ্যে চার জনকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দুইজনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। যাত্রিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কয়েকজন পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
দুর্ঘটনায় কবলিত বাসের যাত্রি ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, সকাল সাড়ে দশটায় বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া থেকে একটি বাস ( যশোর জ ১১-০০৮০) যশোর অভিমুখে ছেড়ে আসে। বাসে ৭০/৭৫ জন যাত্রি ছিলো। বেলা এগারোটার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিনে বোলদে ঘাটা নাম স্থানে পৌছালে বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের পাশে একটি পুকুরের মধ্যে উল্টে পড়ে। জায়গাটি জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় আশে পাশের অনেক মানুষ তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন নিকটে হওয়ায় সেখানকার কর্মীরাও দ্রুত ছুটে আসেন। খুব অল্প সময়ে আহতদের উদ্ধার করে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের আনা হয়। হাসপাতালের জুরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ছাড়াও যারা বাসায় ছিলেন তারাও দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। আহতদের উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া বাঘারপাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সৈনিক আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, যে পুকুরের মধ্যে বাসটি পাল্টি খেয়েছে সেখানে খুব অল্প পানি ছিলো। যে কারণে সকল যাত্রিই প্রানে বেঁচে গেছেন। পুকুরে যদি বেশি পানি থাকতো তাহলে অনেক যাত্রিকে প্রাণে রক্ষা করা সম্ভব হতো না। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, বাসের মূল চালক গাড়িতে ছিলেন না। বাসটি হেলপার চালাচ্ছিলেন।
হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাঃ সুবির জানিয়েছেন, একই সাথে অনেক রুগির চাপ পড়ায় সেবা দিতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। আহতদের সবাই আগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করে। যে কারণে সময়টা আরো বেশি লেগেছে। বেলা এগোরাটা দশ মিনিটের দিকে আহতরা হাসপাতালে আসা শুরু করে। বেলা একটা পর্যন্ত তাদের জরুরী বিভাগে সেবা দেওয়া হয়। প্রচুর ভীড় থকায় আহতদের নাম রেজিষ্টার ভুক্ত করাও সম্ভব হয়নি। এমনকি দুইজনকে যশোর স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের নামও এন্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। শুধু জরুরী বিভাগের টিকিটেই কাজ সারতে হয়েছে। তবে আনুমানিক চল্লিশজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশদের শরিরের ভিবিন্ন স্থানে সেলাই দিতে হয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন শেখেরবাতান গ্রামের সুহান আলীর মেয়ে রুপালী, অন্তারামপুরের আব্দুর রহমানের মেয়ে লামিয়া, নারিকেলবাড়িয়ার আলীমের স্ত্রী রোজিনা ও দোহাকুলার মৃত বারিক মোল্যার ছেলে কুদ্দস। আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গিয়েছেন।
ক্ষেত্রপালা গ্রামের শহীদ মোল্যার ছেলে আলী হোসেন যশোর এমএম বিশ^বিদ্যালয় কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত বাসের যাত্রি ছিলেন। তিনি জানান গতকাল তার পরীক্ষা ছিলো। ঐ বাসে তার মতো প্রায় ২৫/৩০ জন ছিলো যারা সকলেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরিক্ষার্থী। কেউ কেউ আহত অবস্থায় বিকল্প ভাবে পরীক্ষা দিতে চলে গেছেন। আর বেশ কয়েকজন বাঘারপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার অপেক্ষায় আটকে গেছেন। আলী হোসেন বিষয়টি যখন বলছিলেন তখন ঘড়ির কাটায় দুপর ১২ টা ৪৫ মিনিট। আর পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১২ টা ৩০ মিনিটে। তার মতো অনেকে সময়মত পরীক্ষার হলে যেতে পারেননি। যে সব শিক্ষার্থী দেরিতে পরিক্ষার হলে গিয়েছেন, তারা পরীক্ষা দিতে পেরেছেন কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি।